Jump to content

User:Sreetama suresh nandini

From Wikipedia, the free encyclopedia

নারায়ন রাও



'কাকা ,মালা ভাচ" চিৎকার করে উঠলো 17 বছরের রাও। "কাকা , হও কাকা মালা ভাচ "! কেউ শুনছে ? নাঃ কেউ না। 17 বছরের কচি রাও এর দেহ টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ল। রক্ত আর অন্তত চতুর্দশীর সিঁধুর রাতের অন্ধকারে এক হয়ে মিলে মিশে গেল। কচি রাও কে কেউ বাঁচাল না।

কি করে শুনবে? শনিবার বড়া তে কেউ যে নেই। ক্রুর লোভী রাঘুনাথ রাও আর তার স্ত্রী আনন্দই বাই আজ যে কচি রাওয়ের রক্ত খাবে বলে সব্বাইকে বাইরে পাঠিয়েছে। ঘোর ষড়যন্তর। ।।

পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে আহম্মদ শাহ আবদালির কাছে মারাঠাদের পরাজয়ের পর পেশোয়া বালাজি বাজিরাও প্রাণ ত্যাগ করেন ।


তখন তাঁর ১৭ বছর বয়স্ক পুত্র প্রথম মাধব রাও[১৭৬২-১৭৭২] পেশোয়া হন । পেশোয়া প্রথম মাধব রাও-এর আমলে মারাঠারা আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে ।

পুনশ্চ ক্ষয় ক্ষতি মিটিয়ে মাধব রাও মারাঠার গৌরবকে পুনরুদ্ধার এ সচেষ্ট হন। আজও মাধব রাওয়ের সেই শৌর্য নিয়ে লোক সংগীত বাঁধা হয়।

"সুরয়া অস্তা চল গেলা, অন্ধকারা হরেলা, চাকমা ড জ্বালা, মাধব রাও হতে থে উড়ালা"

এর সঙ্গে তিনি একটি কাজ খুব মনযোগ সহকারে করতেন। সেটি হল ছোট্ট ভাই মাধব রাও কে একজন সুযোগ্য পেশোয়া হিসাবে গঠন করার কাজ।

ছোট ভাইটি তার বড় প্রানের কাছের ছিল। যুদ্ধ বিদ্যা থেকে রাজনীতি সর্ব বিষয় কচি রাওকে পারদর্শী করছিলেন তিনি।কিন্তু ভাগ্যদেবী অন্তরালে বঙ্কিম হাসছিলেন।


আর একজন ডাইনি তাদের কু সর্বদা প্রার্থনা করছিল। কাকী আনন্দই বাঈ।কিন্তু হঠ্যাৎ ই মাধব রাও মারা গেলেন। ছোট ভাইটি অনাথ হল ।

কিন্তু প্রথম মাধব রাও-এর অকাল মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে ভাই নারায়ণ রাও ১৭৭২-১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া পদ লাভ করলেন।

কাকা রঘুনাথ রাওয়ের ত্বতাবধানে রাজত্ব চালনার কাজ শুরু করেন। ছোট্ট 17 বছরের রাও দাদার দেওয়া জ্ঞানে রাজনৈতিক কিছু পটুতা অর্জন করলেও বাচ্চামি তার মধ্যে থেকেই গেছিল।

লোভী কাকা রঘুনাথ রাও নিজ বিচার ধারায় রাজ্য পরিচালনা শুরু করল।ফলত কচি রাও এর সাথে প্রায়ই অশান্তি শুরু হতে লাগল। তবুও চল ছিল। কিন্তু নজর তো নিজের লোকের লাগে।

অনাথ ছোট নারায়ণ রাওয়ের ক্ষেত্রেও তার পরিবর্তন হল না। ঘরে ছিল এক ডাইনি। কাকী আনন্দই বাঈ। দিনরাত কি করে কচি ছেলেটার রক্ত খেয়ে রাজ সিংহাসন হাসিল করবে সেই চিন্তায় মগ্ন থাকত।

রঘুনাথে স্ত্রী আনন্দই বাঈ সাধারণ মহিলাদের মত ছিল না।অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী লোভী ছিল।

তার মন কেবল এই বলত যে "আমার স্বামী মারাঠা সাম্রাজ্যের জন্য এত বড় যোগদান দিল। আর সে রাজা না হয়ে একটা পরের ছেলে সিংহাসন পেল। সে আবার আমাদের মাথার উপরে ছড়ি ঘটাচ্ছে।আমার কথা শোনা তো দূর আমাকে অপমান করে। একে কেটে টুকর করতে পারলে ভারী সুখ হত ।" শুরু থেকে রঘুনাথ ও আনন্দই র নজর ছিল রাজগদ্দির উপর। ছোট রাও একা এত বড় দায়িত্ব কিছুতেই নিতে পারত না। ছোট হবার জন্য তার ক্রোধ কিছু বেশী ছিল। হঠাৎ ই রঘুনাথ রাও অসহযোগিতা শুরু করলেন।

ছোট নারায়ণ রাও দিসেহারা হয়ে পড়লেন।কি করবেন তিনি? কোথায় যাবেন? ভেবেছিলেন কাকা রাজ্য চালনায় সাহায্য করবেন। কিন্তু একি? কেন তিনি অনাথ হলেন? শত প্রশ্নে তিনি জর্জরিত হয়ে উঠলেন। কাকে ভরসা করবেন? বাধ্য হয়ে কাকা কাকী কে নজর বন্ধী করলেন।

নজর বন্ধী করে নারায়ণ রাও ভাবলেন ঘরের মধ্যে কাকার মাধ্যমে যে ক্ষতির আশঙ্কা ছিল তা আর নেই। নিশ্চিত হলেন।কিন্তু বিধি ছিল বাম । করাল মৃত্যুর গ্রাস তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছিল।

সেদিন ছিল অন্তত চতুর্দশী। দুম দুম নাকারা বাজতে লাগল সকাল থেকে। ঢং ডং ঘন্টা বাজতে লাগল সিদ্ধিবিনায়কের পূজা ঘরে।সিঁধুর এ লাল হল চারিদিক। শনিবার বড়া হৈ হৈ করে উঠল উৎসবের আনন্দে। পুরোহিত মন্ত্র উচ্চারন করতে লাগলেন।

এত দিন পর নারায়ণ রাও আজ বড় খুশি। অনেক দিন পর তিনি ধীরে ধীরে একা এখন রাজকার্যে দায় নিতে শিকছেন। দরকার নেই কারুর সাহায্যের।নিজের লোকই বেইমানি করে। তিনি জানেন না আজ তার খুশি শেষ হাসি। কাল তিনি মৃত হবেন।

30 শে আগস্ট 1773 খ্রিস্টাব্দ তার জীবনের আখড়ি দিন হল।নারায়ণ রাও জানতেও পারলেন না যে তার জীবন এক জন নয় বরং অনেকে মিলে নিতে চলেছে সেই রাতেই। একটা চক্র ব্যুহ আজ তাকে গ্রাস করবে। আর সেটা তার কাকা বানিয়েছে কেল্লার গার্দিদের নিয়ে।

গার্দি মানে গার্ড। সে সময় মারাঠি ট্রেন্ড ফৌজ কে গার্দি বলত। ছত্রপতি শিবাজী বা তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম যে সুশিক্ষিত মারাঠি গার্দি তৈরি করেছিল তার শুদ্ধতা পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পর আর ছিল না। তাতে আলাদা ধর্ম ও জাতির লোক এসেছিল।

তাদের দেশপ্রেম কম ও অর্থ প্রেম বেশি হয়ে উঠেছিল। এসে জুটেছিল বেশ কিছু বিজপুরী মুসলিম। মহম্মদ ঈসাব, সুমের সিং, করক সিং এদের নিয়ে কাকা রঘুনাথ রাও নারায়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সূচনা করেন। সেই ষড়যন্ত্রের মূল মখখি রানী হল আনন্দই বাঈ। রঘুনাথকে সকাল সন্ধ্যা বোঝাতে থাকল, বিষ দিতে থাকল নারায়নের বিরুদ্ধে।

বিষধগারের ফল কাকা রঘুনাথ সিলমোহর চাপ দিয়ে এক চিঠি লিখতে বসলেন। লিখলেন চিঠি সব সুমের সিং, করক সিং , মহম্মদ ঈসাব এই সব গার্দি সরদারকে। যেখানে লেখা হল "নারায়ণ রাও লা ধারা" অর্থাত্ নারায়ণ রাওকে বন্দী করো।

কিন্তু রাক্ষুসী আনন্দই বাঈ সুযোগের পুরো সদ ব্যবহার করলে। চিঠি নিয়ে নিল পত্র বাহকের হাত থেকে। কচি ছেলের রক্তের ইচ্ছা তার খুব। তাই বাই চিঠিতে একটি অক্ষর পাল্টে ড। যেখানে লেখা হল "নারায়ণ রাও লা মারা" অর্থাত্ নারায়ণ রাওকে হত্যা করো।

'ধাগামা কিয়া ধাগামা কিয়া এহি তো হ্যায় ইতিহাস'। এক অক্ষরের বদল ইতিহাস বদলে দিল।

রাতের আঁধারে হামলা হল নারায়ণ রাওয়ের ওপরে ।সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তারা নারায়ণ রাওর কক্ষে পৌছায়। নারায়ণ বোঝে এই ষড়যন্ত্র তার কাকার ছাড়া আর কারোর নয়। তবু ছোট রাও তিনি তাঁর প্রাণ বাঁচানোর জন্য কাকা আমাকে বাঁচিয়ে নাও , "কাকা ,মালা ভাচ"বলে দৌড়াতে থাকে।

কাকার পায়েকিন্তু তিনি ধরা পড়ে যান এবং তাঁকে হত্যা করা হয়। তার শরীরকে কেটে টুকর টুকর করার গার্দিরা। একটি কলসির ভিতরে ভরে । কাকা চাইলেই তাকে বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু লোভ তিনি মুখ ঘুরিয়ে থাকলেন।

শরীরের যত নিশ্বাস ছিল তার থেকে বেশি টুকরো হলেন নারায়ণ রাও।

অভিশপ্ত শনিবার বড়া কে ঘিরে আছে এক শনি মন্দির ও পাঁচ দরজা। 5 টি বড় দরজা, স্তম্ভ, বাগান, ঝর্ণা যা এখনও আকর্ষণীয়। এটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল 16,110 টাকা।

পাঁচটি দরজা হলো দিল্লি দরওয়াজা, মাস্তানি দরওয়াজা, খিড়কি দরওয়াজা, গনেশ দরওয়াজা, এবং দক্ষিণের বেল গাছের পাশে বেলি দরজা।

এই বেলি দরজা দিয়েই সেই অভিশপ্ত রাতে নারায়ণ রাওয়ের টুকরো দেহ গার্দিরা মটকি ভরে নিয়ে বেরল। নদীর জলে মটকি ভাসিয়ে দিল।এই দরজা আজ তাই নারায়ণ দরজা নামে পরিচিত।

সকাল হতেই চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ল। প্রজাগন ধিক্কার দিয়ে উঠল । রঘুনাথএর সিংহাসন দরকার ছিল? নিজের ছেলে আর ভাইয়ের ছেলের মধ্যে পার্থক্য কি? মারাঠা জাতর কি বড় লজ্জা।

খুনের ঘটনার ছানবিন হল।

(রবীন্দ্রনাথের বিচারক)

সহসা কাহার চরণে ভূপতি

         জানালো পরম দৈন্য?

সমরোন্মাদে ছুটিতে ছুটিতে

সহসা নিমেষে কার ইঙ্গিতে

সিংহদুয়ার থামিল চকিতে

         আশি সহস্র সৈন্য?


ব্রাহ্মণ আসি দাঁড়ালো সমুখে

         ন্যায়াধীশ রামশাস্ত্রী।

দুই বাহু তাঁর তুলিয়া উধাও

কহিলেন ডাকি, "রঘুনাথ রাও,

নগর ছাড়িয়া কোথা চলে যাও,

         না লয়ে পাপের শাস্তি?'


নীরব হইল জয়কোলাহল,

         নীরব সমরবাদ্য।

"প্রভু, কেন আজি' কহে রঘুনাথ,

"অ্যাসময়ে পথ রুধিলে হঠাৎ!

চলেছি করিতে যবননিপাত,

         জোগাতে যমের খাদ্য।'


কহিলা শাস্ত্রী, "বধিয়াছ তুমি

         আপন ভ্রাতার পুত্রে।

বিচার তাহার না হয় য'দিন

ততকাল তুমি নহ তো স্বাধীন,

বন্দী রয়েছ অ্যামোঘ কঠিন

         ন্যায়ের বিধানসূত্রে।'


রুষিয়া উঠিলা রঘুনাথ রাও,

         কহিলা করিয়া হাস্য,

"নৃপতি কাহারো বাঁধন না মানে--

চলেছি দীপ্ত মুক্ত কৃপাণে,

শুনিতে আসি নি পথমাঝখানে

         ন্যায়বিধানের ভাষ্য।'


কহিলা শাস্ত্রী, "রঘুনাথ রাও,

         যাও করো গিয়ে যুদ্ধ!

আমিও দণ্ড ছাড়িনু এবার,

ফিরিয়া চলিনু গ্রামে আপনার,

বিচারশালার খেলাঘরে আর

         না রহিব অ্যাবরুদ্ধ।'


বিচারে আনন্দই বাঈ, সুমের সিং, রঘুনাথ দসী সাব্যস্ত হল। রঘুনাথ কূটনীতিক ছিলেন। সব দায় আনন্দই এর ওপর দিয়ে নিজে রেহাই পেলেন।

আনন্দই পাপ মোচনের প্রায়শ্চিত্ত করতে বাকি জীবন হোম যোগ করেই কাটায়। মারাঠা সমাজ কিন্তু রঘুনাথকে মেনে নেয় না।

বাজিল শঙ্খ, বাজিল ডঙ্ক,

         সেনানী ধাইল ক্ষিপ্র।

ছাড়ি দিয়া গেলা গৌরবপদ,

দূরে ফেলি দিলা সব সম্পদ,

গ্রামের কুটিরে চলি গেলা ফিরে

         দীন দরিদ্র বিপ্র।


তথ্যঃ Govind Sakharam Sardesai (1968). New History of the Marathas: Sunset over Maharashtra (1772-1848)